কখনও কড়া নির্দেশ দিলেন, বালি পাচারকারীদের গ্রেফতার করতে হবে। আবার কখনও দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে কড়া বার্তা দিয়ে সাফ জানালেন, তিনি ‘কেয়ার’ করার লোক নয়, বরং ‘ডেয়ার’ করার লোক।
বুধবার ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক বৈঠকে সরকারি প্রতিনিধি, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্তাদের অভাব-অভিযোগ শোনেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন। তারইমধ্যে ঝাড়গ্রামের এক আধিকারিক অভিযোগ করেন, রাত ১১ টা বাজলেই জেলায় বালি ও মোরাম পাচার চলে। তাতে প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধে গাফিলতিরও অভিযোগ তোলেন ওই আধিকারিক।
আরও পড়ুন : শীঘ্রই আরও ৩৯ বিশেষ ট্রেন শুরু, ৫ টি পেল বাংলা, দেখে নিন পূর্ণাঙ্গ তালিকা
তাতে রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন মুখ্যমন্ত্রী। ঝাঁঝালো ভাষায় বলেন, 'এটা ওরা দেখে না কেন? বারবার বলতে হয় কেন? কার এত ইন্টারেস্ট? আমি বলেছি, যেই হোক, বালি-টালি আমি পাচার করতে দেব না। কড়া ব্যবস্থা নিন।'
মুখ্যমন্ত্রীর সেই রণমূর্তিতে জেলাশাসক আয়েসা রানি জানান, নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। এফআইআর দায়ের করা হচ্ছে। জরিমানাও ধার্য করা হচ্ছে। সেই জরিমানার যুক্তিতে অবশ্য খুশি হননি মুখ্যমন্ত্রী। কড়া ভাষায় বলেন, ‘অ্যারেস্ট করুন কয়েকটাকে, তবেই তো ঠিক হবে। যারা এগুলো করে, তাদের অ্যারেস্ট করুন। তবেই কাজ হবে।’
আরও পড়ুন : 'সব তো দিয়েছি, এবার আপনারা কিছু দিন’, ঝাড়গ্রামে জমি পুনরুদ্ধারে মরিয়া মমতা
পরে পাট্টা প্রদানের প্রসঙ্গ উঠলে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই অত্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হলেও অনেক ক্ষেত্রে নীচুস্তরে তা মানা হচ্ছে না। নিজেই সেরকম একটি উদাহরণ তুলে ধরেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আর একটা কথা বলি, তুমি হয়তো মনোজ (মনোজ পন্থ, রাজ্যের অর্থসচিব) নির্দেশ দিচ্ছ। জেলাশাসক নির্দেশ দেওয়ার পরও লোকাল লেভেলে অনেকে কাজটা করছেন না। আমি কি একটা উদাহরণ এখনই দেব? বোলপুরের এএলআরও। একজন বিখ্যাত ডাক্তারের জমির মিউটেশনের বিষয়ে। বাকিটা বললাম না কী চেয়েছে। তাঁকে বলেছে, না দিলে পড়ে থাকবে। বলেছেন, ডিএম নির্দেশ দিয়েছেন, জেনুইন কেস, তাহলে কেন করছেন না। (তাতে বলেছে) বড়রা বললে কী হবে, আমি তো নীচু তলায় ফেলে রেখে দেব।'
এতক্ষণ তবুও কিছুটা রাগ নিয়ন্ত্রণে ছিল মুখ্যমন্ত্রীর। কিন্তু তারপরই রাগের বাঁধ ভেঙে যায়। অত্যন্ত কড়া ভাষায় বলেন, ‘এত বড় সাহস হয় কীভাবে। কার এই সাহসটা বেড়েছে, আমি জানতে চাই। এটা ভাববেন না, এক বছর পর ভোট আছে, মমতাদিকে এখন বেগ দিই। মমতাদি, এসব কেয়ার-টেয়ার করে না। আমি সারাজীবন ডেয়ার করার লোক। আমি ঝড় পেরিয়ে চলার লোক, আমায় কেউ এক চোখ দেখালে আমি দু’চোখ দেখাই, যদি কেসটা জেনুইন হয়।
আরও পড়ুন : ফেসবুক কম করে ছোটাছুটি করলে অনেক কাজ করতে পারেন জেলাশাসক : মমতা
পরে তিনি জানান, প্রশাসনের শীর্ষস্তরের তরফে থেকে বিষয়টিতে ব্যবস্থান নেওয়া হবে। একইসঙ্গে মনোজ পন্থকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘বলে দিও ভগবানের উপর সুপার ভগবান আছে, সেটা হল মানুষ। আমি করতে দেব না, আমিটা কে? আমিত্বটা এল কোথা থেকে?’