যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর রহস্য মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে প্রাক্তন ছাত্র সৌরভ চৌধুরী। প্রাথমিকভাবে তাঁর কথায় অসঙ্গতির কারণেই প্রথমে আটক ও পরে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে সৌরভের বাবা-মায়ের দাবি, কোনওভাবেই তাঁদের ছেলে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। উলটে স্বপ্নদীপের বাবার বিরুদ্ধেই ছেলেকে ফাঁসানোর অভিযোগ তুলেছেন সৌরভের মা প্রণতি চৌধুরী। গ্রেফতারের আগে সৌরভ তার মাকে ফোনে বলেছিল, সে কোনও ভুল করেনি। তাই কোন শাস্তি হবে না। কার্যত তেমনিই দাবি করেছেন সৌরভের মা।
আরও পড়ুন: 'পুরষাঙ্গের দৈর্ঘ্য, বাবা-মায়ের যৌনমিলনের দিন'- যাদবপুরের ‘ইন্ট্রো’ আদতে কী?
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌরভ পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণার বাসিন্দা। সৌরভের গ্রেফতারের কথা শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা প্রণতি এবং বাবা নীরব। পরিবারের সদস্যরা দাবি করেছেন, সৌরভ নির্দোষ। সৌরভের মায়ের স্পষ্ট দাবি, তাঁর ছেলে কখনওই ধরনের কাজ করতে পারে না। কারণ সৌরভ ভালো ছেলে ছিল। এই মৃত্যুর জন্য সৌরভ দায়ী নয় বলেই দাবি করছেন। তিনি জানান, সৌরভকে গ্রেফতারের আগে শুক্রবার বিকেলে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। ফোনে সৌরভ তার মাকে জানিয়েছিল, ‘আমার শাস্তি হবে না। কারণ আমি কোনও ভুল করিনি।’
জানা গিয়েছে, সৌরভ এমএসসি পাস করেছে ২০২২ সালে। নিয়ম অনুযায়ী, যাদবপুর হস্টেলে পড়ুয়াদের অতিথি হিসেবে থাকা যায় । তাই পড়াশোনা শেষ করার পরেও এক বছর ধরে অতিথি হিসেবেই ছিল সৌরভ। কিন্তু সেক্ষেত্রে পুলিশ জানতে পেরেছে, সৌরভ নিজেই নিজের অতিথি হিসেবে ছিল। আর তাতেই খটকা লাগছে তদন্তকারীদের। সেক্ষেত্রে সৌরভ প্রভাবশালী কিনা, তা উঠছে প্রশ্ন।
স্বপ্নদীপের বাবা রামপ্রসাদ কুণ্ডু যে অভিযোগ জানিয়েছেন, তাতে সৌরভের নাম রয়েছে। এরপরেই তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। কিন্তু তাতে সৌরভের কথায় নানা অসঙ্গতি ধরা পড়ে। তারপরে তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জানা যায়, সৌরভ বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র। স্বপ্নদ্বীপের বাবা দাবি করেছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি চায়ের দোকানে সৌরভের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাঁর ছেলের। সৌরভের মাধ্যমেই জানতে পেরেছিলেন যে হস্টেলে গেস্ট হিসেবে থাকা যায়। সৌরভের কথায় ভরসা পেয়ে ছেলেকে ভাইয়ের মতো দেখার জন্য সৌরভের কাছে অনুরোধ করেছিলেন রামপ্রসাদ।
অভিযোগ, স্বপ্নদ্বীপের খুনের ঘটনা সঙ্গে বেশ কয়েকজন জড়িত। তাঁকে অত্যাচার করে খুন করা হয়েছে। তবে সৌরভের মায়ের দাবি, ‘আমার ছেলে নির্দোষ তাকে ফাঁসানো হয়েছে। স্বপ্নদ্বীপের বাবা-মা মিলে আমার ছেলেকে ফাঁসিয়েছে।’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌরভ হস্টেলে ছয় বছর ধরে রয়েছেন। তাঁর মা বলেন, ‘এত বছর ধরে থাকার পরেও আমার ছেলের সম্পর্কে কোনওদিন কোনও খারাপ কথা শুনিনি। হস্টেলের ছেলেরাও ওকে ভালবাসে। প্রথমে ও একটি ঘর ভাড়া নিয়েছিল। কিন্তু থাকতে পারেনি। তাই আবার হস্টেলে ফিরে যায়। চাকরি পেলেই সে ঘর ছেড়ে দেবে বলেছিল।’ সৌরভ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে দাবি করেছেন তার মা।