২০১৪ আর ২০১৭ মধ্যে দুরত্ব কতটা? করুণাময়ীতে ৫০০ মিটার। এই ৫০০ মিটারের ব্যবধানে ওই দুই সালের টেট চাকরি প্রার্থীরা আন্দোলনে বসেছেন। সেই আন্দোলনের দাবিও এক অথচ ব্যবধান গড়েছে দু’পক্ষের ভাবনা। দু’পক্ষ পরস্পরকে প্রতিপক্ষ ভাবতে শুরু করেছে।
করুণাময়ীতে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দফতরের সামনে ২০১৪ সালের আন্দোলনকারীদের অনশন ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়েছে। অন্য দিকে বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে বিক্ষোভ দেখাতে যায় ২০১৭ সালের টেট প্রার্থীরা। কিন্তু আটকে দেওয়ায় দফতরের অফিসের সামনে বসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন তাঁরা। ‘চাকরি চাই’ স্লোগানের পাশাপাশি তাঁদের দাবি তাঁরাই আসলে ‘বৈধ প্রার্থী’ আন্দোলনকারী ২০১৭ প্রার্থীরা ‘অবৈধ’।
বাঁকুড়া থেকে এসেছেন মদন কর্মকার। তিনি বলেন, ‘আমরা ২০১৭ সালের টেট প্রার্থী। কিন্তু আমাদের পরীক্ষা হয় চার বছর বাদে। আমরা এনসিডি-র গাইডলাইন মেনে পরীক্ষা দিয়েছি। অর্থাৎ টেট পরীক্ষার আগে একটি প্রশিক্ষণ নিতে হয়। আমরা সেই প্রশিক্ষণ নিয়ে টেট পরীক্ষা দি। কিন্তু পরীক্ষার ফল বেরোলে দেখা যায় আমরা পাশ করছি ৯,৮৯জন। কিন্তু আমাদের চাকরি হয়নি।' ২০১৪ সালের টেট প্রার্থীদের আন্দোলন প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘ ওরা এনসিডি-র গাইডলান মেনে পরীক্ষা দেয়নি। দুটি ধাপে ওদের ষাট হাজার পরীক্ষার্থী চাকরি পেয়েছে। অথচ আমরা গাইড লাইন মেনে পরীক্ষা দিয়েও আমাদের চাকরি হয়নি। অথচ আমরা দেখেছি ২০১২ সালে সরকার আঠার হাজার নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৪ সালে ষাট হাজার নিয়োগ হল। কিন্তু ২০১৭-তে নিয়োগের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে মাত্র ১১ হাজার নিয়োগ হবে। তাও আবার ১৪ এবং ১৭ সালের মিলিত ভাবে। এটা কেন হবে।’
একই দাবি স্বাগতা দত্তের। তাঁর কথায়, 'আমরা চাই ২০১৭-র সব চাকরি প্রার্থীদের নিয়োগ হোক। আবার ইন্টারভিউতে বসতে বলছে আমাদের। ওদের(২০১৪-র প্রার্থী) তো দু’বার ইন্টারভিউ হয়ে গিয়েছে। আমরা কেন ওদের সঙ্গে ইন্টারভিউতে বসব। আমাদের তো একবারও ইন্টারভিউ হয়নি।’
আন্দোলনকারীদের এই আড়াআড়ি বিভাজনের অন্য প্রান্তে অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে সুর ততটা চড়া না হলেও, কোথায় যেন এই বিভাজন রেখা অস্বস্তির কারণও বটে। তবে তাঁরা এই বিভাজনের বদলে চান চাকরি হোক সকলের। আন্দোলেন নেতত্বে থাকা পূর্ব মেদিনীপুরে রাখি কোলে (২০১৪-র টেট প্রার্থী) বলেন, ‘আমাদের ২০১৭ ভাইদের সঙ্গে কোনও বিধাজন নেই । আমরা চাই সকলের চাকরি হোক।’ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, '২০২০ সালে মুখ্যমন্ত্রী তৎকালীন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছিলেন ২০১৪ সালের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সমস্ত টেট পাশ চাকরি প্রার্থীদের চাকরি হবে। প্রথম ধাপে ষোল হাজার এবং পরের ধাপে সাড়ে তিন হাজার। কিন্তু আমরা আরটিআই (তথ্যের অধিকার আইন) করে জানতে পারি ষোল হাজারের মধ্যে মাত্র সাড়ে হাজার নিয়োগ হয়েছে। পর্ষদ সভাপতি বলেছেন আমাদের দাবি ন্যায্য নয়। তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাই ন্যায্য নয়।' তাঁর আরও বক্তব্য,'২০১৪-র সালেরই যেখানে নিয়োগ সম্পূর্ণ হয়নি সেখানে তা স্থগিত রেখে তিনি কী ভাবে ২০১৭-র নিয়োগ করবেন।'
যদিও পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছেন, তাঁর চোখে সব প্রার্থীই সমান। আইন ভেঙে তাঁকে কোনও কিছু করতে বাধ্য করা হলে তাঁর অনশনে বসার অধিকার রয়েছে। তিনি অনুরোধ করছেন আন্দোলন তুলে নেওয়ার। তবে দু’পক্ষ ভাবে অনড় তাতে আন্দোলন ওঠার সম্ভাবনা কম। যদি তা চলমান হয় তবে পর্ষদ সভাপতি কী করেন এখন সেটাই দেখার। যদি ২০১৪-র আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ভাবনা-চিন্তা চলছে ২০১৭ সঙ্গে কথা বলার।