একটি বিশেষ শ্যুটে আমাদের লেন্সের জন্য পোজ দিচ্ছেন, অভিনেত্রী অনন্যা পাণ্ডে এবং তার মা, রিয়েলিটি টিভি তারকা ভাবনা পাণ্ডে মা দিবসে তাদের ম্যাজিকাল বন্ডিং-এর বিষয়ে কথা বললেন।
অনন্যা পাণ্ডে তার সন্তানসম পোষ্য রিয়টকে কাছ ছাড়া করছেনা এক মুহূর্তও। এদিকে মা ভাবনা পাণ্ডে এখন তার সন্তান অনন্যা-কে একা থাকতে দিতে শিখছে কারণ সে তার নতুন অ্যাপার্টমেন্টে থাকতে শুরু করেছে। তাদের জীবনের এই মূহুর্তে এখন এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। প্রথমবারের মতো যে যার স্ব-স্ব জায়গায় প্রতিশ্রুতি রক্ষার্থে ব্যস্ত! এইচটি সিটি শো-স্টপার্সের এই স্পেশাল শুটিংয়ের জন্য পরিকল্পনা করতে হয়েছিল বিস্তর।মা মেয়েকে মানানসই পোশাকে সত্যিই লাগছিল অতুলনীয়।
মা মেয়ে দুজনেরই কাজের গতি কেমন চলছে?
অনন্যা: (হেসে) বাড়ির সবাই হঠাৎ খুব ব্যস্ত, এমনকি আমার বাবা (অভিনেতা চাঙ্কি পাণ্ডে) গুজরাটি, তামিল, ওটিটি শোতে চলচ্চিত্র করছেন। মায়ের শো দ্য ফ্যাবুলাস লাইভস অফ বলিউড ওয়াইভস শুরু হয়েছে। আমিও কাজ করছি। আমরা যখন বাড়িতে থাকি, অনেক কম কাজ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছি। আমরা আমাদের জীবন সম্পর্কে আরও বেশি কথা বলি।
ভাবনা: এটা সত্যিই আশ্চর্যজনক, আমরা সবাই ব্যস্ত। তবে আমি অনন্যা আর চাঙ্কির পেশাটা ভালোভাবে বুঝি। আগে এই ব্যপারে সেনসিটিভ ছিলাম। আমি এখন অভিনেতাদের প্রতি আরও শ্রদ্ধা করি, এটা একটা কঠিন কাজ কারণ আপনাকে কেবল সুন্দর দেখতে হবে না, আপনার সাথে দেখা হওয়া প্রত্যেকের সাথে আপনাকে সুন্দর হতে হবে। এই লাইনে থাকাকালীন আপনার নিজের ব্যক্তিগত মেজাজ বেরিয়ে আসলে হবে না। আমার মনে আছে চাঙ্কি ১২ ঘন্টা শ্যুট করার পরে কাজ থেকে ফিরে আসবে এবং আমাকে বলবে যে শুটিং কেমন হয়েছে। আজ, আমি জানি দীর্ঘসময় আপনি যখন ক্যামেরার সামনে থাকেন, তারপর আপনি বাড়িতে এসে এতটাই ক্লান্ত হয়ে পড়েন যে আপনার একাকী সময়ের প্রয়োজন।
অনন্যা, তুমি কি তোমার মাকে টিপস দিচ্ছ?
অনন্যা: আমি মনে করি না তার টিপসের দরকার আছে! আমি তাকে শুধু বলছিলাম শুটিংয়ে কী করতে হবে, আর সে আমাকে ব্যঙ্গ করে বলছিল, 'ওহ, তুমি কেন পরিচালক হও না!' আমি মনে করি আপনি একজন অভিনেতা হিসাবে লোকেদের পর্যবেক্ষণ করে মা অনেক কিছু শিখেছে, ইতিমধ্যে মা এটিতে বেশ দক্ষ।
ভাবনা: আমি শেখার লাইনে ভয়ানক।ধৈর্যের সাথে লাইন পড়ে সেই চরিত্রে ঢোকার মত ক্ষমতা আছে বলে আমি মনে করিনা।
তুমি যখন বড় হচ্ছিলে তখন ভাবনা কেমন মা ছিল, অনন্যা-- হেলিকপ্টার মা নাকি শান্ত?
অনন্যা: হেলিকপ্টার নয়। স্কুলজীবনে মা বেশ কঠোর ছিল, আমার স্কুলের সমস্ত কাজের সঙ্গে জড়িত ছিল। আমি প্রথম সন্তান ছিলাম আর মা আমার সব প্রজেক্ট করে দিত। আমি বলব না যে আমি খুব আহলদী ছিলাম, তবে আমার সবকিছু সঠিক রাস্তায় সংশোধন করতে সাহায্য করে গেছে মা। পরিবারের কেউ আমাকে বলেছিল, গোপনে আমার মা একজন অভিনেতা হতে চেয়েছিলেন। এছাড়াও, আমি তাকে সব কিছু বলতাম, এমনকি ছোট জিনিসও। মা বরাবরই খুব কুল। আমি যখন একজন অভিনেতা হিসাবে আমার ক্যারিয়ার শুরু করি তখন মা আমার সঙ্গে ভীষণভাবে জড়িত ছিল, আমার তাকে দরকার ছিল। মা আমাকে সাহায্য না করলে আমি কোথাও হারিয়ে যেতাম। এখন আমি মনে করি সে বুঝতে পেরেছে যে আমি নিজেই জিনিসগুলি পরিচালনা করতে পারবো।
ভাবনা: হয়তো অনন্যা বুঝতে পেরেছে যে তার জীবনে নতুন সন্তানের সঙ্গে যে মা হওয়া কেমন লাগে...
অনন্যা: রিয়ট বাড়িতে এসেছে কয়দিন হলো! আমি ৩দিনের মাথায় মা কে রাতে মেসেজ করে বলেছিলাম 'মা হওয়া কঠিন' (হেসে)
ভাবনা: অনন্যা অনেকটা তার বাবার মতো...রিয়ট এখন এসেছে, আমাদের তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমি এমন একজন মা যে তার জন্মের সময় থেকে ভালবাসায় ভরিয়ে রেখেছিলাম মেয়েকে, চাঙ্কিও তাই। মেয়ে অন্ত তার প্রাণ ছিল। চাঙ্কি এবং আমার বিয়ে হয় যখন আমার বয়স ছিল ২৩, তার বয়স ছিল ৩৫। এতো তারাতারি অনন্যা আমার গর্ভে চলে আসে, যে হানিমুনে আমি গর্ভবতী ছিলাম। চাঙ্কির সব বন্ধুদের ইতিমধ্যেই বাচ্চা ছিল। আমার মনে আছে রাতে, অনন্যা যখন ওর খাটে ঘুমাতো তখন মাঝরাতে মেয়ে ঠিকমত শ্বাস নিচ্ছে কিনা বাবা তা পরীক্ষা করতে যেত।
অনন্যা: আমিও একই কাজ করি রিয়টের সাথে।অনন্যা চলে যাওয়ার পর থেকে আপনাদের দুজনের জীবন কেমন চলছে? ছোট মেয়ে রাইসাও বিদেশে পড়াশোনা করছে।
ভাবনা: অনন্যা এই বছরের জানুয়ারিতে তার নতুন অ্যাপার্টমেন্টে চলে গেছে।
অনন্যা: আমি এটা ভালোবাসি! আমি কখনোই বিদেশে পড়াশোনা করতে যাইনি, কখনো বাড়ির বাইরে থাকিনি। আমি একা থাকি কিন্তু বাবা মায়ের কাছাকাছি। এখান থেকে আমার নিজের দায়িত্ত্ব নিজেকে নিতে শেখায় এবং নিজের বাবা-মায়ের উপর নির্ভর না করে।মা বাবার খুব কাছে যদিও আছি, তাও যতটা সম্ভব দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছি। এটা আমাকে অনেক কিছু শেখায়। এটা মানুষের কাছে বড় ব্যাপার বলে মনে হবে না, কিন্তু এটা এমন কিছু যা আমি আগে করিনি। আমি স্কুলের পরেই কাজ শুরু করি। শুরুতে মা অতটা মেনে নিতে না পারলেও, এখন সব ঠিক ঠাক।
ভাবনা: শুরুতে, অনন্যা চলচ্চিত্রে জগতে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তার নিজের জায়গা তৈরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু আমি মনে করেছি যে তার এখনই অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়া উচিত নয়। কতজন সৌভাগ্যবান যে তারা মুম্বাইতে থাকেন, এবং সবকিছু দেখাশোনা করতে পারছে? আমি এমন লোকদের দেখেছি যারা এরপর কী খাবে তা নিয়ে চিন্তা করতে হয়। ও ভাগ্যবান যে ও এই জিনিসগুলো পেয়েছিল। আমি মনে করি যে এটির সদ্ব্যবহার করা উচিত এবং কেবলমাত্র কাজে মনোনিবেশ করা উচিত। আমি শুরুতে নার্ভাস ছিলাম, কিন্তু যখন রাইসা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তাদের এগোতে দেওয়া উচিত, তবেই তারা শিখবে। আমরা অভিভাবক হিসাবে তাদের যতটা পারি রক্ষা করতে চাই।
আপনারা দুজনেই শোবিজে আছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়াতেও খুব অ্যাক্টিভ। একে অপরকে যখন ট্রোলড বা নেতিবাচকতার মুখোমুখি হতে দেখেন তখন আপনারা দুজন কীভাবে সেটা হ্যান্ডেল করেন?
অনন্যা: আমি আর কমেন্ট পড়ি না।
ভাবনা: মানুষ ওর সম্পর্কে যা লিখেছিল তা আমাকে বিরক্ত করত। আমি বুঝতে পেরেছি যে ১০০ জন লোক আপনার সম্পর্কে খারাপ কথা বললেও, এটি মহাবিশ্বের কাছে একটি ছোট দাগ মাত্র। অনেক মানুষ আছে যে তোমাকে ভালোবাসে! তারা কেউ পরিচয়হীন নয়। আমার সম্পর্কে খুব বেশি খারাপ লেখা আছে বলে মনে হয় না। এই ‘বুড়ি’ বা 'এই মহিলারা কেন এই শো করছেন, তারা তারকা স্ত্রী নন'- এই কথাও উঠবে। তাদের বলি, প্রথমত, আপনিও একদিন এই বয়সে আসতে চলেছেন, এবং দ্বিতীয়ত, আমরা নিজেদের কখনও তারকা স্ত্রী বলিনি, আমরা নিজেদের বলিউড স্ত্রী বলেই দাবি করি। এর বেশি কিছুই না। এটা আসলেই কিছু ব্যাপার নয়।