এই মুহূর্তে বাংলা টেলিভিশনের সবচেয়ে চর্চিত নায়িকাদের অন্যতম স্বস্তিকা ঘোষ মানে ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র দীপা। বছর দেড়েক আগেও সে-ভাবে কেউ চিনতো না রায়দিঘির এই কন্য়েকে। তবে ‘দীপা’ বদলে দিয়েছে স্বস্তিকার ভাগ্য। কেরিয়ারের সাফল্য থেকে 'সূর্য' দিব্যজ্য়োতির সঙ্গে সম্পর্কের চর্চা, সব নিয়ে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার সঙ্গে অকপট আড্ডায় স্বস্তিকা।
‘সরস্বতীর প্রেমে’-এ পার্শ্ব চরিত্র থেকে স্টার জলসার নায়িকা, নিজের সফরটা কেমনভাবে দেখছো?
স্বস্তিকা: ইন্ডাস্ট্রিতে আমার সব মিলিয়ে চার বছর হল। ছোট থেকেই ইচ্ছে ছিল অভিনেত্রী হব। স্বপ্ন, ইচ্ছে, জেদ আর বাবা-মা'র আর্শীবাদ না থাকলে বোধহয় এখানে আসতে পারতাম না। ২০১৯ সাল থেকে আমি টলিপাড়ায় অডিশন দিচ্ছি। লম্বা ট্রেন জার্নি করে এখানে আসা, সেইদিনগুলো আজও মনে রয়েছে। যেদিন ‘সান বাংলা’য় সরস্বতীর প্রেমে অডিশন দিয়েছিলাম,ওইদিনই জানতে পারি আমি সিলেক্ট হয়েছি। ওখানে লিড হিসাবেই অডিশন দিয়েছিলাম তবে পার্শ্ব চরিত্রে আমাকে বাছা হয়েছিল। আমার জার্নিটা খুব কঠিন ছিল, এমনটা বলব না। আমি ছ'মাস মতো স্ট্রাগল করেছি।
অনুরাগের ছোঁয়ার ‘দীপা’ হয়ে ওঠার পর স্বস্তিকার জীবন কতটা বদলে গিয়েছে?
স্বস্তিকা: আমি আগের জীবনটা খুব মিস করি। শুরু থেকেই জানতাম, সিরিয়াল হোক বা বড়পর্দা- পপ্য়ুলার ফেস হতে গেলে কিছু জিনিসের মুখোমুখি হতে হয়। আগে আমি যখন-তখন রাস্তায় বেরিয়ে যেতাম, ফুচকা খেতাম। সেটা এখন পারি না। তাও চেষ্টা করি নর্ম্য়াল লাইফটা বাঁচার। দীপার ভূমিকায় অভিনয় করার পর থেকে আমি অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। এমনকি যারা আমার সঙ্গে সম্পর্ক একসময় রাখেনি, তাঁরাও এখন যেচে কথা বলে। এই জিনিসগুলো বড় পাওয়া।
স্বস্তিকা বাস্তব জীবনে ফর্সা অথচ পর্দায় 'কালো মেয়ে' দীপা, কতটা চ্যালেঞ্জ ছিল?
স্বস্তিকা: আমি যখন প্রথম অডিশন দেওয়ার পর লুক সেট করা হয়েছিল, দেখেছিলাম আমি বাইরে থেকে বদলে গিয়েছিলাম। তবে আমার একবারও মনে হয়নি কিন্তু যে দর্শক স্বস্তিকাকে চিনতে পারবে না। আমার গায়ের রং দীপার মতো নয় ঠিকই, কিন্তু সেটা নিয়ে আমি কোনওদিন চিন্তিত ছিলাম না। একদমই মনে হয়নি এরপর স্বস্তিকা ঘোষের আইডেনটিটি থাকবে না। বরং মনে হয়েছিল এই চরিত্রটা আমাকে অনেককিছু দেবে, অনেককিছু শেখাবে। ‘অনুরাগের ছোঁয়া’র গল্পটা আমাকে অনেক পরিণত করেছে।
দীপার জীবনের স্ট্রাগল কী শেখালো?
স্বস্তিকা: এই বয়সে আমার অনেক অভিজ্ঞতা হচ্ছে। বিয়ের পরের জীবন কেমন হয়, বাচ্চা মানুষ কীভাবে করতে হয়, সেটা শিখছি। সব থেকে বড় কথা দীপার জীবনের যে স্ট্রাগলটা…মাকে হারানো, সৎ মা-সৎ বোনের সঙ্গে বড় হওয়া, বিয়ের পর শাশুড়ি মায়ের ওকে না মেনে নেওয়া, এখন স্বামীর ওকে অস্বীকার করা, মেয়ের থেকে দূরে থাকা। এগুলো কিন্তু অনেক মেয়ের সঙ্গেই ঘটে। বাস্তবের সঙ্গে মিল রয়েছে বলেই কিন্তু ‘অনুরাগের ছোঁয়া’ এত জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
সবচেয়ে বড় কথা বাচ্চাদের সঙ্গে শ্য়ুটিং করাটা একটা অভিজ্ঞতা। ওদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে হয়। মাথা গরম করলে চলে না। আগে আমি খুব অর্ধৈয্য ছিলাম, রেগে যেতাম, এখন বদলে গিয়েছি। এই পেশায় ধৈর্য খুব জরুরি। আগের স্বস্তিকার সঙ্গে এখনকার স্বস্তিকার অনেক পার্থক্য। আমি এখন রাগ কন্ট্রোল করতে শিখে গিয়েছি। সোনা-রূপার মা হয়ে ধৈর্য্যশীল হয়ে পড়েছি।
তোমরা একটানা ২৭ সপ্তাহ টিআরপি টপার, সেরা হওয়ার চাপ কতটা কাজ করে?
স্বস্তিকা: আমাদের এখন কাজের চাপ প্রচণ্ড কারণ সপ্তাহে সাত দিন টেলিকাস্ট। তাও পরিচালক চেষ্টা করেন আমাদের একদিন ছুটি দেওয়ার। একটা ছুটির জন্য প্রত্য়েক কলাকুশলী প্রচণ্ড পরিশ্রম করে। টিআরপি-র কথা বলতে গেলে বলব, আমরা প্রত্যেকদিন পরীক্ষা দিতে আসি, আর বৃহস্পতিবার আমাদের রেজাল্ট আসে। আমরা টিআরপি ভালোই আসবে আসা করি। কম এলে মন খারাপ করি না, বরং এনার্জি আরও বেড়ে যায়। আরও ভালো কাজ করতে হবে, এটা বলে আমরা নিজেদের মোটিভেট করি।
দিব্যজ্যোতি সঙ্গে তোমার অনস্ক্রিন রসায়ন নজরকাড়া, অফ-স্ক্রিনে তোমাদের বন্ধুত্ব নিয়ে এত চর্চা, কী বলবে?
স্বস্তিকা: সূর্য-দীপাকে দর্শক শুরু থেকেই ভালোবাসা দিচ্ছে। প্রথমদিকে কিন্তু অফস্ক্রিনে দিব্যজ্যোতির সঙ্গে আমার কেমিস্ট্রি খুব ভালো ছিল না। আমি একদম নতুন, ও তিন-চারটে সিরিয়াল করে এসেছে। ওকে আমি খুব বেশি চিনতামও না। ওকে জয়ী-তে প্রথম দেখেছিলাম। তবে কনটিনিউ ওর সিরিয়াল দেখিনি। প্রথমদিকে ওর সঙ্গে সিনও খুব কম থাকলো। দু থেকে তিন মাস পর থেকে যখন ওর সঙ্গে আমার প্রচুর প্রচুর সিন আসতে থাকে, তখন ওর সঙ্গে আমার ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে যায়। আর চার মাসের মাথায় আমার সঙ্গে ওর তুতুকারি শুরু হয়। ক্য়ামেরার পিছনের কেমিস্ট্রি জমে যায়। আমি আসলে শুরুতে একটু লাজুক ছিলাম, এখনও আছি (হাসি)। তবে দিব্যর সঙ্গে আমার মেন্টালিটি ম্যাচ করে। আমি খুব বেছে বন্ধু বানাই। হঠাৎ করে কাউকে বন্ধু বানাতে পারি না। ওর সঙ্গে আমার খুব স্ট্রং বন্ধুত্ব। তাই হয়তো দর্শকের মনে হয় আমরা প্রেম করি। সেটা কিন্তু একদম নয়।
আর সহ-অভিনেতা হিসাবে ওর দুর্দান্ত। আমি সত্যি লাকি যে আমার প্রথম নায়ক দিব্যজ্যোতি। যখন আমাদের খুব কঠিন দৃশ্য থাকে আমাকে ও খুব সাহায্য করে। আমরা শট দেওয়ার আগে তিন-চারটে মনিটর (রিহাসার্ল শট) করি। আমাকে ও বুঝিয়ে দেয় এই দৃশ্য়টা এইভাবে কর। তোর এই লাইনটা বলতে অসুবিধা হচ্ছে? সহজ করে বল। বেশি অসুবিধা হলে দাদাকে (পরিচালক) বলে বাদ দিয়েদে। শুধু দিব্য় নয়, গোটা টিমই আমাকে সাহায্য করে।