ঘুষ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন করার মামলায় সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। লোকপালের নির্দেশেই সিবিআই এই তদন্ত শুরু করেছে। এই নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মহুয়া মৈত্র। উল্লেখ্য, বর্তমানে লোকপালের মাথায় স্থায়ী কোনও চেয়ারম্যান নেই। এই আবহে মহুয়া এক সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট করে লোকপালের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেন। তিনি লেখেন, 'দেখে হাসি পাচ্ছে যে কীভাবে মুণ্ডহীন লোকপাল, যার স্থায়ী কোনও চেয়ারম্যান নেই... তারা আমার মামলাটি সিবিআই-এর কাছে পাঠাতে পারে। ৩ নভেম্বরে করা একটি আরটিআই জানাচ্ছে, ২০২২ সালের মে থেকেই লোকপালের কোনও স্থায়ী চেয়ারম্যান নেই। এদিকে আট সদস্যের মধ্যে ৩টি পদও শূন্য পড়ে আছে। মনে হচ্ছে ঝাড়খণ্ড শাখার পিটবুল লোকপাল কমিটিতে মুনলাইটিং করছেন।' (আরও পড়ুন: PPE কিট কেনায় ১০০০ কোটির দুর্নীতি! ED, IT থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রককে চিঠি শুভেন্দুর)
আরও পড়ুন: এই কাজ না করলে বেশি দামে কিনতে হবে LPG সিলিন্ডার, মাথায় হাত পড়বে আম জনতার?
এদিকে সম্প্রতি প্রথমবারের মতো মহুয়ার সমর্থনে মুখ খুলেছিলেন মমতা। এরপর মহুয়ার বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের খবর প্রকাশ্যে আসতেই তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল এর তীব্র নিন্দা করেন গতকাল। তিনি বলেন, 'মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে আবার একই চিত্রনাট্য, অর্থাৎ বিজেপির চক্রান্ত। বিজেপি রাজনৈতিকভাবে তৃণমূলকে মোকাবিলা করতে পারছে না। বিজেপি-বিরোধী কণ্ঠ তৃণমূল কংগ্রেস। তাই এই এজেন্সিগুলির অপব্যবহার করে এক-এক রকম গল্প তৈরি করে যেভাবে তৃণমূল নেতৃত্বকে টার্গেট করে হেনস্থা করা হচ্ছে, সেভাবেই মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সিবিআইকে নামানো হয়েছে। সিবিআইকে নামিয়ে বিজেপি কাদা ছোড়াছুড়ি করছে। এজেন্সি দিয়ে বাংলার মাটিতে এই চক্রান্ত সফল হবে না। বাংলার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা, বৈষম্য রাজনীতির যে চিত্রনাট্য চলেছে, মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে সিবিআইকে নামিয়ে তারই পুনরাবৃত্তি করা হল।'
উল্লেখ্য, এর আগে সিবিআই-এর কাছে মহুয়ার বিরুদ্ধে 'টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন' করার মামলায় অভিযোগ জানিয়েছিলেন মহুয়ার প্রাক্তন বন্ধু জয় অনন্ত দেহদরাই এবং বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। এদিকে এই বিতর্ক নিয়ে হলফনামা দিয়েছিলেন শিল্পগোষ্ঠী হিরানন্দানির সিইও দর্শন হিরানন্দানি। তাতে আরও চাপে পড়েন মহুয়া মৈত্র। হলফনামায় হিরানন্দানি দাবি করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বদনাম করতে আদানি গ্রুপকে নিশানা করেছিলেন মহুয়া। আদানি গোষ্ঠীকে চাপে ফেলার মতো প্রশ্ন তৈরি করে দেওয়ার জন্য নাকি হিরানন্দানিকে সংসদের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন মহুয়া। হলফনামা অনুযায়ী, দর্শন হিরানন্দানির দাবি, আদানি গোষ্ঠীকে চাপে ফেলার মতো প্রশ্ন তৈরি করে দেওয়ার জন্য তাঁকে সংসদের লগইন আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন। পরিবর্তে তাঁর থেকে মহুয়া বিলাসবহুল জিনিসপত্র নিতেন। হিরানন্দানি দাবি করেছেন, খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই জাতীয় স্তরের রাজনীতিতে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণ করার পথ বেছে নেন মহুয়া। কিন্তু স্বচ্ছ ভাবমূর্তির কারণে নীতি সংক্রান্ত বিষয়, প্রশাসনিক বিষয়ে মোদীকে আক্রমণের সুযোগ পাননি মহুয়া। সেজন্য আদানি গোষ্ঠীর মাধ্যমে মহুয়া প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণের পন্থা বেছে নেন। এদিকে হিরানন্দানিকে পাসওয়ার্ড ও আইডি দেওয়ার কথা স্বীকার করলেও কোনও ধরনের ঘুষ নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন মহুয়া।
এদিকে হিরানন্দানি দাবি করেছিলেন, ২০১৭ সালে বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে মহুয়ার সঙ্গে প্রথম দেখা হয়েছিল তাঁর। সেইসময় বিধায়ক ছিলেন মহুয়া। ২০১৯ সালে সাংসদ হন মহুয়া। সেই সময় ব্যবসায়িক 'দ্বন্দ্ব' চলছিল আদানি এবং হিরানন্দনিদের মধ্যে। দর্শনের সংস্থার সঙ্গে চুক্তি না করে আদানি গোষ্ঠীর ধর্মা এলএনজির সঙ্গে চুক্তি করেছিল ইন্ডিয়ান অয়েল। এই আবহে আদানির বিরুদ্ধে প্রশ্নমালা তৈরি কে দেওয়ার জন্য দর্শনকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন মহুয়া। এর জন্য তাঁকে সংসদের লগইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়েছিলেন মহুয়া। হলফনামায় দাবি কর হয়, ক্রমেই মহুয়ার সঙ্গে হিরানন্দনির সম্পর্ক ভালো হতে থাকে। পরে তাঁর থেকে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করতে থাকেন মহুয়া। তাঁর ওপর নাকি মহুয়া চাপও সৃষ্টি করেছিলেন। এই আবহে মহুয়ার কথা মতো চলতে বাধ্য হয়েছিলেন। কিন্তু এখন বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন শুরু হওয়ায় তিনি নিজে থেকেই মুখ খুলেছেন বলে দাবি করেন হিরানন্দানি। পরে সংসদের এথিক্স কমিটি মহুয়ার বিরুদ্ধে পদক্ষেপের সুপারিশ করে এই মামলায়।