একধাক্কায় প্রায় দেড় গুণ হল মন্ত্রীর সংখ্যা। কোপ পড়ল একাধিক শীর্ষ মন্ত্রীর উপর। সেইসঙ্গে টিম নরেন্দ্র মোদীতে ঠাঁই পেলেন ৩৬ জন নয়া মুখ। কেউ কেউ ‘প্রমোশন’ও পেলেন। কিন্তু আচমকা কেন একধাক্কায় কার্যত নয়া টিম তৈরি করলেন মোদী? বিশেষজ্ঞদের মতে, একেবারেই আচমকা নয়। সুচিন্তিত পদক্ষেপের মাধ্যমেই রদবদল করেছেন মোদী। কোন পাঁচ অঙ্ক নির্ণায়ক হল -
প্রথমত, মন্ত্রিত্বের ক্ষেত্রে ‘রেজাল্টের’ উপর যে মোদী গুরুত্ব দিয়েছেন, তা গোপন নেই। সেই মাপকাঠির নিরিখে সবার আগে উঠে আসছে প্রাক্তন স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন এবং প্রাক্তন তথ্যপ্রযুক্তি রবিশংকর প্রসাদের নাম। তাঁদের 'ছাঁটাই' করার কোনও কারণ দেওয়া না হলেও হর্ষবর্ধন যে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে পারেননি, তা আর গোপন নেই বলে দাবি বিরোধীদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা নিয়ন্ত্রণ যে আরও ভালোভাবে করা যেত, তা কার্যত স্বীকারই করে নিয়েছে মোদী সরকার। সেইসঙ্গে নয়া তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ম নিয়ে প্রসাদের কাজেও খুশি হননি মোদী।
দ্বিতীয়ত, আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ, গুজরাতের মতো একাধিক রাজ্যে বিধানসভা ভোট আছে। পরের বছর কর্নাটকে পরীক্ষার মুখে বসবে বিজেপি। সেই রাজ্যগুলির রাজনীতিতে ফায়দা তোলার লক্ষ্যেও একাধিক রদবদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেমন - উত্তরপ্রদেশকে সাতজন মন্ত্রী ‘উপহার’ দিয়েছেন মোদী। কর্নাটকেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। করোনার মধ্যে গুজরাতের সাংসদ মনসুখ মাণ্ডবিয়াকে স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রকের শীর্ষে বসানো হয়েছে।
তৃতীয়ত, ‘পুরস্কার’ হিসেবে মন্ত্রিত্ব পেয়েছেন নব্য হেভিওয়েট বিজেপি নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তাতে নব্যদেরও বার্তা দেওয়া যাচ্ছে যে ‘ভালো’ কাজ করলে মিলবে স্বীকৃতি। সেইসঙ্গে রাজ্যস্তরে দুই শীর্ষনেতার দ্বন্দ্ব রুখে ‘ভারসাম্য’ বজায় রাখতে একজনকে নিজের কাছে জেকে নিয়েছেন মোদী। যেমন - অসমের মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে সর্বানন্দ সোনোওয়াল এবং হিমন্ত বিশ্বশর্মার মধ্যে ‘ঠান্ডা যুদ্ধ’ চলছিল। তাতে অসমের মুখ্যমন্ত্রিত্ব গিয়েছে হিমন্তের হাতে। আর 'সান্ত্বনা পুরস্কার' হিসেবে সোনোওয়ালকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পুনর্বাসন দিয়েছেন মোদী।
চতুর্থত, দ্বিতীয় দফার মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সবথেকে বড় অভিযোগ ছিল যে জোটসঙ্গীদের নিয়ে চলতে পারে বিজেপি। বিশেষত শিরোমণি অকালি দল এনডি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ায় একমাত্র মন্ত্রী ছিলেন রামদাস আথাওয়ালে। সেই দুর্নাম মুছতে জনতা দল (ইউনাউটেড), লোক জনশক্তি পার্টি (এলজেপি) এবং আপনা দলের সাংসদদের মন্ত্রী করা হয়েছে।
পঞ্চমত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ঝাঁপি উজাড় করে ভোট দিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণির ভোটাররা। ২০২৪ সালে তফসিলি জাতি ও উপজাতি, অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি-সহ পুরো হিন্দু ভোট একত্রিত করতে বাড়তি নজর দিয়েছেন মোদী। তারই অঙ্গ হিসেবে মোদীর নয়া টিমে ২৭ জন অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি এবং ২০ জন তফসিলি জাতি ও উপজাতি শ্রেণিভুক্ত মন্ত্রী আছেন।