ব্রিটেন থেকে ভারতে ফিরতে চলেছে ঐতিহাসিক 'বাঘনখ'। বাঘের নখের মতো দেখতে যে ধারালো ছোরা দিয়ে ১৬৫৯ সালের ১০ নভেম্বর বীজাপুর সাম্রাজ্যের মুঘল সেনাপতি আফজল খানকে হত্যা করেছিলেন ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ। তবে পরবর্তীতে তা হাতবদল হয়ে ইংল্যান্ডে চলে গিয়েছিল। আপাতত লন্ডনের ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামে সেটি প্রদর্শিত হয়। সেখান থেকে ভারতে ঐতিহাসিক 'বাঘনখ' ফিরিয়ে আনার জন্য মউ স্বাক্ষরিত হবে। আর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের মধ্যেই নিজের ‘দেশে’ ফিরে আসবে 'বাঘনখ'।
বিষয়টি নিয়ে মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী সুধীর মুঙ্গান্তিওয়ার জানিয়েছেন, ব্রিটেন সরকারের তরফে একটি চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে যে ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের ‘বাঘনখ’ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আফজল খানকে হত্যার বর্ষপূর্তিতে (হিন্দু ক্যালেন্ডারের ভিত্তিতে) সেটা হাতে পেতে পারে মহারাষ্ট্র সরকার। আরও কয়েকটি সম্ভাব্য দিনক্ষণ নিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। কোন পথে ভারতে 'বাঘনখ' ফিরিয়ে আনা হবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, বাঘনখ ফিরিয়ে আনার জন্য চলতি মাসেই লন্ডনে যাবেন। ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের সঙ্গে মউ স্বাক্ষর করবেন।
কীভাবে শিবাজি মহারাজের ‘বাঘনখ’ ব্রিটেনের মিউজিয়ামে চলে গেল?
সাতারায় মহারাজ ছত্রপতি শিবাজির উত্তরাধিকারীদের কাছে 'বাঘনখ' ছিল। যা পরবর্তীতে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্তা জেমস গ্র্যান্ট ডাফের (১৮১৮ সালে সাতারায় নিযুক্ত হয়েছিলেন ডাফ) হাতে তুলে দিয়েছিলেন পেশোয়া। ১৮২৪ সাল পর্যন্ত সাতারা কোর্টে কর্মরত ছিলেন ডাফ। তারপর নিজের সঙ্গে 'বাঘনখ' নিয়ে ব্রিটেনে ফিরে গিয়েছিলেন। পরে ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের হাতে সেই ঐতিহাসিক অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন ডাফের উত্তরাধিকারী।
কীভাবে মহারাজ শিবাজি সেই ‘বাঘনখ’ ব্যবহার করতেন, সেই বিষয়ে রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, আঙুলের গাঁটে ‘বাঘনখ’ পরে থাকতেন। এমনভাবে সেই ধারালো ছোরা তৈরি করা হয়েছিল যে আঙুলের গাঁটে পরে থাকা যেত। হাতের তালুর নীচে এমনভাবে ‘বাঘনখ’ থাকত যে কেউ টেরও পেতেন না যে মহারাজ শিবাজির হাতে কোনও অস্ত্র আছে। কিন্তু যখন ঘুষি চালাতেন মহারাজ শিবাজি, তখন ফালাফালা হয়ে যেতেন শত্রু। যে অস্ত্রে চারটি ধারালো 'মুখ' আছে।
আর সেই ঐতিহাসিক অস্ত্রের সঙ্গে মহারাষ্ট্রের মানুষের আবেগ জড়িয়ে আছে বলেও জানান মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী। তিনি জানান, ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ হল ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের 'বাঘনখ'। শুধু তাই নয়, বিষয়টির সঙ্গে মারাঠা আবেগও জড়িয়ে আছে। তাই শিবাজি মহারাজের ‘বাঘনখ’ ফিরে আসার বিষয়টি মহারাষ্ট্রের মানুষের জন্য একটা বড়সড় প্রাপ্তি।
সেইসঙ্গে মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক 'বাঘনখ' ফেরানোর জন্য ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়ামের সঙ্গে মউ স্বাক্ষরের ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের অন্যান্য সামগ্রী ফিরিয়ে আনার বিষয়েও আলোচনা চালানো হবে। যেগুলি ব্রিটেনের হাতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মহারাষ্ট্রের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী।