রামনবমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজ্যে পর পর অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। শিবপুর থেকে রিষড়া নিয়ে তপ্ত রাজ্য–রাজনীতি। বঙ্গ বিজেপি এই ঘটনা দুটিকে নিজেদের দিকে কাজে লাগাতে বাংলার পুলিশ–প্রশাসন কতটা ব্যর্থ সেটা নয়াদিল্লিতে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বসে জাতীয় সংবাদমাধ্যমের সামনে সবিস্তারে তা তুলে ধরতে চেয়েছিল। তাই সাংবাদিক বৈঠকও ডাকা হয়েছিল। কিন্তু ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। তাই এসব করতে গিয়ে কার্যত নিজেদের জালেই জড়িয়ে গেল রাজ্য বিজেপি। কে বেশি কথা বলেছেন, কে ততটা সুযোগ পাননি—সাংবাদিক সম্মেলন শেষের অব্যবহিত পরেই এই ইস্যুকে ঘিরেই প্রকাশ্যে বিতণ্ডায় জড়িয়ে গেলেন বঙ্গ–বিজেপির দুই মহিলা সাংসদ। সাংবাদিক সম্মেলন করতে যান বঙ্গ–বিজেপির জগন্নাথ সরকার, খগেন মুর্মু, লকেট চট্টোপাধ্যায় এবং দেবশ্রী চৌধুরী। সাংবাদিক সম্মেলনে বেশি সময় কথা বলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হন দেবশ্রী। জারি বচসা।
এদিকে, কেন তিনিই সব কথা বলে দিলেন? হুগলির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের দিকে আঙুল তুলে এই প্রশ্ন করেন রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। আর বলেন, ‘আমার সঙ্গে এরকম নোংরা রাজনীতি করো না।’ পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে বঙ্গ বিজেপির দু’জন সাংসদের এভাবে প্রকাশ্যেই কোন্দলে জড়িয়ে পড়ার ঘটনায় গোটা দলে অস্বস্তি চরমে উঠল। রায়গঞ্জের সাংসদের দাবি, এই সাংবাদিক সম্মেলনের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনিই। দলের আইটি সেলের সভাপতি অমিত মালব্যর সঙ্গে ফোনে কথা বলে এই ব্যবস্থা করেন তিনি বলে দাবি তাঁর। দেবশ্রীর অভিযোগ, তাঁর এই উদ্যোগ বিফলে গেল। কারণ লকেট চট্টোপাধ্যায় নোংরা রাজনীতি করেছেন।
অন্যদিকে একটি প্রশ্ন এখন বড় আকার নিয়েছে। সেটি হল, এখনই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বাংলা থেকে কটা আসন জুটবে? নয়াদিল্লির দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যেখানে সাংবাদিক সম্মেলন করা হচ্ছিল সেখান থেকে কিছুটা দূরে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের বসার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানেই সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হওয়ার পরে মঞ্চে দেবশ্রী চৌধুরী মুখের সামনে আঙুল নেড়ে লকেট চট্টোপাধ্যায়কে কড়া কথা বলছেন। দু’জনের মধ্যে চলছে তখন উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়। লকেট কেন এত কথা বললেন? সাংবাদিক সম্মেলন শেষে মূলত এই প্রশ্নেই হুগলির সাংসদকে চেপে ধরেন দেবশ্রী।
তারপর ঠিক কী ঘটল? এই ঘটনা প্রকাশ্যে এসে যাওয়ায় লকেট বিষয়টি থামানোর চেষ্টা করেন। আর দেবশ্রীকে জানান, তিনি এই ব্যাপারে কিছু জানেন না। তাঁর উপর যেমন নির্দেশ এসেছে, তিনি তেমন কথা বলেছেন। মঞ্চে তখন উপস্থিত ছিলেন বঙ্গ বিজেপির আরও দুই সাংসদ জগন্নাথ সরকার এবং খগেন মুর্মু। যদিও তাঁরা নীরব ছিলেন। লকেট তখন দেবশ্রী চৌধুরীকে বলেন, ‘আপনি শান্ত হোন। আমাকেও ফোন করে সাংবাদিক সম্মেলন করতে বলেছিলেন অমিত মালব্য। না হলে আমি আসব কেন?’