শুভব্রত মুখার্জি: ২০০৭ সালে প্রথমবার আয়োজন হয়েছিল টি-২০ বিশ্বকাপের। সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। সেই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন দীনেশ কার্তিক (ডিকে)। কাকতলীয়ভাবে চলতি টি-২০ বিশ্বকাপেও ভারতীয় দলের সদস্য ডিকে। রাহুল দ্রাবিড়ের প্রশিক্ষণাধীন ভারতীয় দলে ফিনিশারের ভূমিকায় রাখা রয়েছে ডিকেকে। ৩৭ বছর বয়সির এটাই সম্ভবত শেষ আইসিসি ইভেন্ট হতে চলেছে।
অন্যদিকে ২৫ বছর বয়সি ঋষভ পন্ত স্কোয়াডে জায়গা পেলেও প্রথম একাদশে এখনও খেলার সুযোগ পাননি। তবে এই দুই তারকাকেই দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের আগে দেখা গেল কঠোর অনুশীলন করতে। একদিকে কার্তিককে যখন করানো হল বিশেষ 'ব্লাইন্ডফোল্ড ড্রিল', তখন নেটে হেড স্যার রাহুল দ্রাবিড়ের তত্ত্বাবধানে টানা দু'ঘন্টা ব্যাট করলেন ঋষভ।
পারথে এদিন ছিল অন্যতম শীতলতম দিন। সেখানেই ডিকেকে লক্ষ্য করে প্রচন্ড জোরে জোরে থ্রো করা হল। যা ধরতে গিয়ে যে বারবার হাতে চোট পাচ্ছিলেন তারকা কিপার তা সহজেই বোঝা যাচ্ছিল। ব্যথার চোটে গ্লাভস মাঝেমাঝেই খুলে ফেলছিলেন তিনি। এরপর তাঁকে এক বিশেষ ধরনের ড্রিল করানো হয়, যার পোশাকি নাম 'ব্লাইন্ডফোল্ড ড্রিল'। ব্যাটাররা যখন কিপারের কিপিংয়ে কার্যত বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখন কিভাবে কিপিং করতে হবে সেই নিয়েই চলে অনুশীলন।
বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবোয়ে ম্যাচের লাইভ আপডেটে চোখ রাখতে ক্লিক করুন
ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপের তত্ত্বাবধানে এই বিশেষ অনুশীলন করেন ডিকে। ব্যাটাররা তাঁর দৃষ্টি ঢেকে দিলেও কিভাবে অ্যালার্ট হয়ে কিপিং করা যায় তার অনুশীলন করেন ডিকে। দিলীপ বেশ কিছু লাল এবং সাদা মার্কার রেখে দেন। প্রায় চার ফুট দূরত্বে রাখা হয় তা। এরপর কার্তিক কল্পনায় থাকা স্ট্যাম্পের পিছনে দাঁড়িয়ে কিপিং করেন। অপরপ্রান্ত থেকে দিলীপ কঠিন কঠিন ক্যাচ দিতে থাকেন। দুই রোডমার্কারের মাঝ দিয়ে বল এমনভাবে মারতে থাকেন যাতে করে তা তোয়ালেতে লেগে দিক পরিবর্তন করে। এখানে তোয়ালে ব্যাটারের ভূমিকা পালন করে, যে বলটাকে একেবারে ঢেকে দেবে। একেবারে শেষ মুহূর্তে বল দেখতে পাবে কিপার। অক্ষর প্যাটেলের মতন বোলার যদি হঠাৎ দ্রুতগতিতে বল করেন এবং সেই বল যদি ব্যাটার মিস করেন তাহলে কিপারের কি করণীয় তা স্পষ্ট করতেই এই বিশেষ অনুশীলন।
উল্লেখ্য, নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচে কার্তিক এইভাবেই বল দেখতে না পেয়ে একটি সহজ স্ট্যাম্পিং মিস করেছিলেন। এইধরনের ড্রিলের ফলে একদিকে যেমন কিপারের ফুটওয়ার্ক ভাল হয় তেমনি অন্যদিকে তাঁর রিফ্লেক্সও বৃদ্ধি পায়। ড্রিলের দ্বিতীয়ভাগে দিলীপ তোয়ালে সরিয়ে সেখানে কিট ব্যাগ বসিয়ে দেন। এরপর লেগের দিকে বল জোরে জোরে ছুঁড়তে থাকেন দিলীপ। অর্থাৎ বোলার যদি কোনও কারণে তাঁর লাইন ভুল করে ওয়াইড বল করে বসেন তখন যাতে বাই রান আটকানো যায় তার অনুশীলন করানো হয় কার্তিককে।
আরও পড়ুন:- Video: নিয়ম মেনে লক্ষ্যপূরণ, অভিনব উপায়ে নন-স্ট্রাইকার ব্যাটারদের শিক্ষা দিলেন ফিলিপস
এরপর কার্তিককে হঠাৎ করে বাজেভাবে ব্যাটের কিনারা লাগা বল কিভাবে ধরবেন তার অনুশীলন করানো হয়। যেখানে একটি রবার ব্যাট ব্যবহার করা হয় যার কানা খুব অমসৃণ। যেখানে বল ভিতরের দিকের কানায় লাগুক কি বাইরের দিকের কানায় বিভিন্ন দিকে তা ছিটকে যেতে পারে। এই অনুশীলনের সময় বাঁহাতে ব্যাট করেন মেন্টাল কন্ডিশনিং কোচ প্যাডি আপ্টন।
একদিকে যখন কার্তিক নিজের বিশেষ অনুশীলন করছেন তখন অন্যদিকে নেটে টানা দু'ঘন্টা কঠোর অনুশীলন করলেন কিপার-ব্যাটার ঋষভ পন্ত। মহম্মদ সিরাজ, শার্দুল ঠাকুরদের বেধড়ক মার মারলেন। আবার মাঝে মাঝে বলও মিস করলেন। তাঁর ব্যাটিংয়ে ঝরে পড়ছিল প্রথম একাদশে সুযোগ না পাওয়ার যন্ত্রণা। যার উপর দূর থেকে দাঁড়িয়ে নজর রাখলেন হেড স্যার রাহুল দ্রাবিড়ও। দু'ঘন্টা ব্যাট করেই থেমে থাকেননি পন্ত। এরপর গ্লাভস পরে কিপিংও অনুশীলন করেন। নুয়ান সেরাভিরত্নেকে দিয়ে ১৫ মিনিট থ্রো ডাউন অনুশীলন করেন। দূর থেকে বসে ক্রিকেটারদের অনুশীলনে চোখ রাখলেন নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মাও। আর পারথের কনকনে ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে তখন অনুশীলনে ঘাম ঝরাতে ব্যস্ত থাকলেন ভারতের দুই কিপার ব্যাটার।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।