বাংলা নিউজ > বাংলার মুখ > অন্যান্য জেলা > বিশ্বভারতীর হাত থেকে রাস্তা ফেরত নিল রাজ্য, 'মুক্ত শিক্ষা হোক', আর্জি মমতার

বিশ্বভারতীর হাত থেকে রাস্তা ফেরত নিল রাজ্য, 'মুক্ত শিক্ষা হোক', আর্জি মমতার

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (ফাইল ছবি, সৌজন্য পিটিআই) 

মমতা বলেন, ‘শুনুন পাঁচিল তুলে দিলে তো সেলফিস জায়েন্টের কথা এসে যাবে।’

বছর তিনেক আগে রাস্তা হস্তান্তর করেছিল পূর্ত দফতর। এবার সেই শান্তিনিকেতনের ডাকঘর মোড় থেকে কালিসায়র মোড় পর্যন্ত রাস্তার দায়িত্ব বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত থেকে ফিরিয়ে নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। সেই মর্মে ইতিমধ্যে নির্দেশিকায় ছাড়পত্র দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সোমবার বোলপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সকালে শান্তিনিকেতনের কয়েকজন আবাসিক তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন। তাঁকে একটি চিঠিও দিয়েছেন। সেই চিঠি পড়ে শুনিয়ে বলেন, ‘এতে তাঁরা প্রধানত লিখেছেন, বিশ্বভারতী কর্তৃক যত্রতত্র কুৎসিত উঁচু পাঁচি নির্মাণ এবং পথ অবরোধ এবং তার ফলে শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক এবং স্থানীয অধিবাসীবৃন্দের দুর্দশার কথা আমরা জানাচ্ছি। শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতনে যাতায়াতের শতাব্দীপ্রাচীন রাস্তাটি যেটা পূর্ত দফতরের নিয়ন্ত্রণে থাকার কথা, (সেখানে) শিক্ষাভবনের মোড় থেকে কাঁচমন্দির পর্যন্ত সবধরনের মালবাহী গাড়ির চলাচল সবসময়ের জন্য বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে। পূর্বে নিয়ন্ত্রণ ছিল সংগীত ভবনের মোড় থেকে কাঁচমন্দির পর্যন্ত সকাল ছ'টা থেকে সন্ধ্যা ছ'টা পর্যন্ত। সেটা ছিল জেলাশাসকের নিয়ন্ত্রণে।’

মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, কাকতলীয়ভাবে সোমবার বীরভূমে আসার আগে হেলিপ্যাডে সেই রাস্তা ফিরিয়ে নেওয়ার নির্দেশিকায় স্বাক্ষর করে এসেছেন। যে ফাইল পূর্ত দফতরের তরফে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল। সেই ফাইল স্বাক্ষরের পরই তিনি চিঠি পড়েছেন বলে দাবি করেন মমতা। একইসঙ্গে আইন মোতাবেক মেনে দ্রুত বিশ্বভারতীর হাত থেকে সেই রাস্তা ফিরিয়ে নিতে উন্নয়নের কাজ করতে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দেন। মমতার কথায়, ‘রাস্তাটা আমরা আবার ফেরত নিচ্ছি। তাহলে আশ্রমের সমস্যাটা সমাধান হয়ে যায়। এই অঞ্চলেই অমর্ত্য সেন, ক্ষিতিমোহন সেন, নন্দলাল বসুদের মতো আশ্রমিকদের বাড়ি এবং বাড়ি মেরামত করার জন্যও কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না।’ সঙ্গে কটাক্ষ করে বলেন, ‘বাদ বাকি লাইনটা পড়লাম না ভদ্রতা করে।’

অথচ মমতার আমলেই সেই রাস্তা বিশ্বভারতীর হাতে তুলে দেওয়ার প্রসঙ্গটি তোলা হয়েছিল। মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ঠিক রাখা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত-সহ বিভিন্ন কারণে সেই সুপারিশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। প্রাথমিকভাবে অবশ্য সেই প্রক্রিয়া আটকে ছিল। পরে ২০১৬ সালে দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে শান্তিনিকেতনে এসেছিলেন মমতা। তখন তাঁকে সেই বিষয়টি জানানো হয়েছিল। তারপর হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় গতি পেয়েছিল। শেষপর্যন্ত ২০১৭ সালের মার্চে সরকারিভাবে ওই রাস্তার নথি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দিয়েছিল পূর্ত দফতর।

কিন্তু পৌষমেলার মাঠে পাঁচিল তোলাকে ঘিরে যে গন্ডগোল হয়েছিল, তা নিয়ে শাসক দল এবং বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীর কার্যত সংঘাত শুরু হয়। তারইমধ্যে মুখ্যমন্ত্রীকে বিশ্বভারতীয় শতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো নিয়েও টানাপোড়েন চলতে থাকে। যে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি ভাষণ দেন বিশ্বভারতীর আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যে অভিযোগ তুলেছিল, তাতে খোলাখুলি নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদের পাশে দাঁড়ান মমতা। ফলে রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতীর সংঘাত ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছিল।

তারপর সোমবার পাঁচিল প্রসঙ্গে সরাসরি উত্থাপন না করেও মমতা বলেন, 'শান্তিনিকেতন যেহেতু রবীন্দ্র সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত, তাই আমি চাই যে রবীন্দ্র সংস্কৃতি এখানে ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা হোক। এখানে ছেলেমেয়েরা যেভাবে নৃত্য, কলা, গান...পৌষমেলা থেকে শুরু করে, এখন অবশ্য সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছে।' সঙ্গে যোগ করেন, 'শুনুন পাঁচিল তুলে দিলে তো সেলফিস জায়েন্টের কথা এসে যাবে। আমরা চাই, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিন্তাধারা যেটা মুক্ত, মুক্ত পরিবেশে শিক্ষা, মুক্ত পরিবেশে শিক্ষাকে এখানে নিয়ে আসুন (বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে উদ্দেশ করে)।'

বন্ধ করুন