কলকাতা পুরসভার পার্কিং ফি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। পার্কিং ফি নির্দিষ্ট করা থাকলেও বিভিন্ন জায়গায় বেশি হারে পার্কিং ফি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। কোথাও প্রতি ঘণ্টায় ৪০ টাকা আবার কোথাও ৫০ টাকা বা তারও বেশি পার্কিং ফি নেওয়া হচ্ছে, যা পুরসভার নির্ধারিত পার্কিং ফিয়ের তুলনায় চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি। আবার কিছু জায়গায় ছুটির দিন পড়লেই বেশি হারে নেওয়া হচ্ছে পার্কিং ফি। শুধু তাই নয়, তিন ঘণ্টার বেশি গাড়ি রাখলে পার্কিং ফি ১০০ টাকাও নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ সামনে আসছে। আর দাবি মতো ফি না দিলেই গাড়ি রাখতে দেওয়া হচ্ছে না। এমন অভিযোগ সামনে আসার পরেই বেজায় ক্ষুব্ধ কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে কারণ জানতে চেয়েছে কলকাতা পুরসভা।
আরও পড়ুন: পার্কিং ফি বাড়ানোর জন্য নবান্নের কাছে অনুমতি নেবে কলকাতা পুরসভা
কলকাতার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে জানা গিয়েছে, বেশ কিছু জায়গায় পুরসভার পার্কিং ফি সংক্রান্ত কোনও রেট চার্ট টাঙানো নেই। যে যার মতো পারছে, পার্কিং ফি নিচ্ছে। শুধু তাই নয়, অনেক ক্ষেত্রেই পার্কিং ফি বাবদ রশিদ দেওয়া হচ্ছে না। তাছাড়া যাঁরা পার্কিং ফি আদায় করছেন, তাঁরা ইউনিফর্ম পড়ে থাকছেন না বা পরিচয়পত্র দেখাতে পারছেন না।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি নয়া পার্কিং নীতি ঘোষণা করেছিল কলকাতা পুরসভা। যেখানে পার্কিং কি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল তিন থেকে চারগুণ। পুরসভার দাবি ছিল, এর ফলে পার্কিং ফি যেমন বাড়বে, তেমনই পুরসভার আয়ও বাড়বে তবে। বেশ কিছুদিন এই নয়া পার্কিং নীতি চালু হয়েছিল। কিউ আর কোড স্ক্যান করে অনলাইনে পার্কিং ফি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে চালু হওয়ার পরে সাধারণ মানুষের কথা ভেবে সেই বর্ধিত পার্কিং ফি নীতি প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু, তারপরেই দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসছে।
কলকাতা পুরসভার মূল ভবনের অদূরেই ধর্মতলার কাছে পার্কিং লটেও দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেখানে গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রে যেমন চার-পাঁচ গুণ বেশি ফি নেওয়া হচ্ছে, তেমনই কোনও রশিদ দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠছে। আর তার প্রতিবাদ জানালে গাড়ি রাখার জায়গা দেওয়া হচ্ছে না এমনও অভিযোগ সামনে আসছে। শুধু ধর্মতলাতেই নয়, ক্যামাক স্ট্রিট অঞ্চলেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। সেখানেও চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি হারে পার্কিং ফি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। সম্প্রতি এ নিয়ে কলকাতা পুরসভার পার্কিং বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন এক ভুক্তভোগী।
আবার গরিয়াহাটেও একই ছবি দেখা গিয়েছে। অভিযোগ, সেখানে আবার সোমবার থেকে শুক্রবার ৬০ টাকা করে প্রতি ঘণ্টায় পার্কিং ফি নেওয়া হলেও শনি এবং রবিবার অর্থাৎ সপ্তাহান্তে ৮০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। তাও আবার রশিদ দেওয়া হচ্ছে না।
এই অভিযোগ পাওয়ার পরেই পদক্ষেপ করেছে কলকাতা পুরসভা। মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার জানিয়েছেন, ‘আমরা অভিযোগ পাওয়ার পরে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে কারণ দর্শাতে বলেছি। আমরা এ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ এ প্রসঙ্গে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘পার্কিং ফি নিয়ে আমরা বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছি। এটা আটকানোর জন্য নতুন পার্কিং নীতি চালু করেছিলাম। কিন্তু কার্যকর করতে পারিনি। এখন এই অভিযোগের দায় আমাদের ঘাড়ে এসে পড়ছে।’