প্রথম সন্তান ছেলে, পারিবারিক ‘সংস্কারে’ মোরগ বলি মেডিকেল চত্ত্বরে

যাঁরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন সেই পরিবারের দাবি, এটা তাঁদের পরিবারের সংস্কার। জানা গিয়েছে, কলকাতা মেডিকেল কলেজে পাঁচদিন আগে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন পার্ক সার্কাসের বছর কুড়ির এক তরুণী।

প্রথম সন্তান হওয়ায় মেডিকেল কলেজে মোরগ বলি দিল বাবা

১৮৩৬ সালে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথম শব-ব্যবচ্ছেদ হয়। সমস্ত কুসংস্কারকে দূরে ঠেলে দিয়ে সেদিন মানবতার স্বার্থে শব-ব্যবচ্ছেদ করছিলেন মধুসূদন গুপ্ত। কিন্তু সেই মেডিকেল কলেজে কুসংস্কারের অন্য ছবি দেখা গেল মঙ্গলবার। প্রথম সন্তান ছেলে হয়েছে বলে হাসপাতাল চত্ত্বরেই মোরগ বলি দিলেন বাবা। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়ায় হাসপাতাল চত্বরে। একুশ শতকে দাঁড়িয়ে কুসংস্কারের এই চর্চায় অনেকেই আবাক হয়েছেন।

যাঁরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন সেই পরিবারের দাবি, এটা তাঁদের পরিবারের সংস্কার। জানা গিয়েছে, কলকাতা মেডিকেল কলেজে পাঁচদিন আগে এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন পার্ক সার্কাসের বছর কুড়ির এক তরুণী। মঙ্গলবার বিকেলে সন্তান-সহ তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়। পরিবারের লোকেরা তাঁকে নিতে আসার সময় সঙ্গে করে মোরগ-সহ বিভিন্ন পুজোর উপকরণ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন। হাসপাতাল থেকে ছুটি মিলতেই মা ও সন্তানকে নিয়ে পরিবারের লোকজনেরা চলে যান হাসপাতালের প্রসুতি বিভাগের পিছনের দিকে।

সেখানে নিরিবিলিতে পান, সুপুরি ও কর্পূর সাজিয়ে পুজোর আয়োজন করেন। সেখানে পানের উপর লাড্ডু রেখে ফুল-মালা দিয়ে পুজো করা হয়। তার পর গঙ্গাজল দিয়ে জায়গাটিকে পরিষ্কার করে মোরগটিকে স্নান করিয়ে পুজো দেওয়া হয়। পরে সেটিকে মালা পরিয়ে বলি দেওয়া হয়। সে সময় কয়েকজন ঘটনাটি দেখতে পান। তারা তখন হাসপাতাল কর্মীদের বিষয়টি জানান। মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানতে পেরে খবর দেয় পুলিশে। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই মুরগী, ফুল, ব্যাগে ঢুকিয়ে স্ত্রী, সন্তানকে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন ওই ব্যক্তি।

এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, 'পুজোয় মোরগ বলি দিচ্ছে দেখে লোকও জড়ো হয়ে যায়। কয়েকজন আপত্তি করায় ওরা তড়িঘড়ি করে সব কিছু করে চলে যান। তার পর আর তাঁদের হাসপাতালে দেখা যায়নি।'

হাসপাতালের ভিতর এই কুসংস্কারের চর্চা দেখে অবাক হয়েছেন অধ্যক্ষ ইন্দ্রনীল বিশ্বাস। তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, 'এমন কাণ্ড এ যুগেও ঘটতে পারে ভাবতে পারছি না। খুবই লজ্জাজনক ঘটনা।'

প্রসূতির স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ করা গেলে পেশায় সাফাইকর্মী ওই ব্যক্তি বলেন, 'এটা আমাদের পরিবাবরের রীতি। প্রথম সন্তান ছেলে হয়েছে। তাই তাকে বাড়ি আনার আগে হাসপাতালে পুজো করেছি।'