এখন তো মহালয়া কাটতে না কাটতেই রাস্তায় ঠাকুর দেখার ভিড়। শিশু থেকে বয়স্ক— কে নেই সেই তালিকায়। কিন্তু সবচেয়ে বেশি মজা করেন বোধহয় যুবক-যুবতীরা। তাঁদের আনন্দই সবচেয়ে বেশি। দলবল মিলিয়ে হুল্লোড়, জমিয়ে পেটপুজো। এই না হলে পুোজর আনন্দ! কিন্তু এমন সদ্য যুবক-যুবতী বা কিশোর-কিশোরীও আছেন, ওই তৃতীয়া-চতুর্থীতেই যাঁদের আনন্দে মাটি। কারা তাঁরা? হালে বিধাননগরের নগরপালের কথায় উঠে এল তাঁদের প্রসঙ্গ।
প্রতি বারের মতোই এবারেও ভিআইপি রোড সংলগ্ন একটি পুজো নিয়ে উত্তেজনা ছিল সপ্তমে। আর সেই পুজোর ভিড় সামলাতে আনা হয়েছিল বহু ভলানটিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবীকে। নিজেদের আনন্দ বিসর্জন দিয়ে তাঁরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। সমবয়সিরা যখন পুজো আনন্দে মাতোয়ারা, এই স্বেচ্ছাসেবীরা তখন ভিড় সামলাতে ব্যস্ত। এমনই এক স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন বিধাননগরের নগরপাল গৌরব শর্মা। তাঁর কথা থেকেই জানা যায়, এক কিশোরের কাহিনি।
(আরও পড়ুন: মণ্ডপ থেকে চুরি! ৬০০টি ফুচকা উধাও বেহালা নতুন দলের প্যান্ডেল থেকে)
কী সেই কাহিনি? অন্য বন্ধুরা যখন পুজোর আনন্দে মেতে উঠেছে, এই কিশোর কেন তখন স্বেচ্ছাসেবী হয়েছে? জানা গিয়েছে, এই কিশোরের বাবা সবজি বিক্রেতা। অর্থনৈতিক অবস্থা মোটেই ভালো নয় পরিবারের। কিশোর নিজে স্নাতক স্তরের পরাশোনা শেষ করেছে। এবার উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু তার জন্য লাগবে বইপত্র। আর সেগুলি কিনতে টাকা। যে টাকায় আছে টান। তাই উৎসবের মরশুমে আনন্দ বিসর্জন দিয়ে রোজগারের লক্ষ্যে গ্রাম ছেড়ে শহরে কিশোর।
(আরও পড়ুন: পুজোর ৬ দিনে ১ কোটিরও বেশি যাত্রী শিয়ালদায়, হল বিপুল আয়)
এই কিশোর একা নয়। এমনই পেটের দায়ে আরও বহু কিশোর-কিশোরী পুজোর সময়ে হাজির হয় শহরে। কারও বাবা হয়তো দিনমজুর, কারও বা পরিবারের কোনও রোজগারই নেই। কখনও পড়াশানার খরচ তুলতে, কখনও বা খাবারের টাকা রোজগার করতে শহরে এসে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হন বহু কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী।
গৌরব শর্মার পোস্টটি ছড়িয়ে পড়তেই অনেকেই বলেছেন, এই কিশোরকে তাঁরা সাহায্য করতে চান। কিন্তু সাহায্য করতে চাওয়া মানুষের তালিকা যতটা না লম্বা, তার চেয়েও বেশি লম্বা অভাবের তাড়নায় স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে যোগ দেওয়া মানুষের তালিকা। তাই শেষ পর্যন্ত এই সব সাহায্যে পরিস্থিতি কতটা বদলাবে, তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই।