নিজের প্রথম ফাঁসির জন্য যে সারাদেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, তা ভালোভাবেই জানেন পবন কুমার। তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য উপচে পড়ছে দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমের ভিড়।
তাঁর উপরই পড়েছে নির্ভয়াকাণ্ডের দোষীদের ফাঁসি দেওয়ার গুরুদায়িত্ব। তিনি হাতল চাপলেই শেষ হবে নির্ভয়ার পরিবারের দীর্ঘ লড়াই। তার আগে সেই ফাঁসুড়ে পবন কুমার জানালেন, চার দোষীর প্রতি তাঁর ছিটেফোঁটাও সহানুভূতি নেই।
মীরাটের ছোটো ফ্ল্যাটে বসে সাত সন্তানের বাবা পবন বলেন, 'যারা মরতে চলেছে, তারা হিংস্র পশুর মতো। মানুষ নয়, ওরা নিষ্ঠুর। তাই ওরা প্রাণ হারাবে। ওদের মতো লোকেদের ফাঁসি হওয়া উচিত যাতে অন্যরা অনুভব করতে পারে, এরকম অপরাধ করলে অন্তিম পরিণতিও এরকম (ফাঁসি) হবে।'
বছর ৫৪-র পবনের বাবা ও দাদুও ফাঁসুড়ে ছিলেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর হত্যাকারী-সহ ১৯৮২ সালে অপহরণ করে একটি খুনের ঘটনায় দোষী দু'জনের ফাঁসি দিয়েছিলেন পবনের দাদু। তাঁকেই নিজের গুরু মানেন পবন। তবে এবারই প্রথম ফাঁসির হাতল চাপবেন তিনি।
নিজের প্রথম ফাঁসির জন্য যে সারাদেশের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, তা ভালোভাবেই জানেন পবন। তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য উপচে পড়ছে দেশ-বিদেশের সংবাদমাধ্যমের ভিড়। সেই লম্বা লাইনের মাঝে সংবাদসংস্থা এএফপির জন্য বরাদ্দ হয়েছিল ২০ মিনিট। সময় শেষ হতেই পবনের ফোনে বেজে ওঠে অ্যালার্ম। সেখানেই সাক্ষাৎকারে ইতি টানতে হয়। তিনি বলেন, 'দেশ-বিদেশ থেকে অনেকে আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন। আপনি (এএফপি সাংবাদিক) একা নন।'
জীবনের প্রথম ফাঁসি দিতে তৈরি পবন (ছবি সৌজন্য এএফপি)
তবে এত সবকিছুর মধ্যে পবনের আক্ষেপ, প্রতি মাসে মাত্র ৫,০০০ টাকা পান তিনি। সেই স্বল্প আয়েই দিন গুজরান করতে হয়। পবনের অবশ্য আশা, নির্ভয়াকাণ্ডে দণ্ডিতদের ফাঁসির পর দেশজুড়ে তিনি সম্মান পাবেন। তা আর্থিক টানাটানির জীবনের যন্ত্রণা পুষিয়ে দেবে। পবনের কথায়, 'পরিবার-সহ চারপাশের মানুষ আমার সঙ্গে সবসময় ভালো ব্যবহার করেছেন। তবে আমি নিশ্চিত, ফাঁসির পর আমার প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে।'
ফাঁসির কার্যকারিতা নিয়েও পবনের মনে কোনও সংশয় নেই। বরং সাফ বললেন, 'মৃত্যুদণ্ড হলে তবেই অপরাধ কমবে। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হলে ওরা (অপরাধীরা) আর্জি জানাবে ও বাইরে বেরিয়ে এসে আরও অপরাধ করবে।'