প্রতিভার ঝলক আগেও দেখা গিয়েছে। সেই প্রতিভা পূর্ণতা পেল ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। রবিবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে ৬২ বলে ১২৪ রান করে যশস্বী জয়সওয়াল বুঝিয়ে দিলেন, বছরকয়েক আগে যে ছেলেটা মুম্বইয়ে ফুচকা বিক্রি করে সংসার চালাতেন, কোনওক্রমে মাথা গুঁজে আজাদ ময়দানের তাঁবুতে দিন গুজরান করতেন, সেই ছেলেটা আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে তুলে নিয়ে যেতে প্রস্তুত। সেইসঙ্গে বিশ্বের কোটি-কোটি তরুণ প্রতিভাদের যেন বার্তা দিলেন, লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে - কাউকে হয়ত বেশিদিন, কাউকে হয়ত কমদিন। কিন্তু লড়াইটা চালিয়ে গেলে সাফল্য আসবে। আর সেই সাফল্যের দিনে পুরো দুনিয়া কুর্নিশ করতে বাধ্য হবে।
যশস্বীর সেই সাফল্যের যাত্রাটা অবশ্য রবিবার রাত থেকে শুরু হয়নি। শুরু হয়েছিল ২০১৫ সাল থেকেই। ছোট্ট-ছোট্ট পা ফেলতে শুরু করেছিলেন। ছোট্ট যশস্বীর প্রতিভার সন্ধান পেয়েছিলেন সান্তাক্রুজের কোচ জ্বালা সিং। তাঁর অধীনেই খেলতে শুরু করেছিলেন যশস্বী। নিখাদ রত্ন চিনতে যে জ্বালা ভুল করেননি, সেই প্রমাণ মিলেছিল ২০১৫ সালেই। মুম্বইয়ের স্কুল ক্রিকেট লিগের পরপর ম্যাচে ভালো খেলতে থাকেন। নজর কাড়তে থাকেন ঘরোয়া ক্রিকেট মহলের। একটি ম্যাচে তো অপরাজিত ৩১৯ রান করার পাশাপাশি ৯৯ রানে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন। যে পারফরম্যান্স ঠাঁই পায় লিমকা বুক অফ রেকর্ডসেও। সেইসঙ্গে মুম্বইয়ের অনূর্ধ্ব-১৬ ডাক পেয়েছিলেন। অনূর্ধ্ব-১৯ স্তরেও মুম্বইয়ের হয়ে নিয়মিত খেলেছিলেন।
তারইমধ্যে ভারতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ডাক পেয়েছিলেন যশস্বী। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন। টুর্নামেন্টের সেরাও নির্বাচিত হয়েছিলেন। যে ছন্দ ধরে রেখেছিলেন ২০২০ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপেও। সেই বিশ্বকাপের ফাইনালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারত হেরে গেলেও নয়া এক রত্ন পেয়ে যায় ভারত। মাত্র ছ'টি ম্যাচে ৪০০ রান করেছিলেন যশস্বী। হাঁকিয়েছিলেন একটি শতরান এবং চারটি অর্ধশতরান। বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি যশস্বীকে।
আরও পড়ুন: আনক্যাপড প্লেয়ার হিসাবে বিরল নজির যশস্বীর, কবে ডাক পাবেন ভারতীয় দলে?
তবে সেই বিশ্বকাপের কয়েকদিন আগেই নিজের স্বপ্নপূরণের জন্য উত্তরপ্রদেশের ভাদোহি থেকে মুম্বইয়ে এসেছিলেন যশস্বী। কালবাদেবীতে একটি দোকানে কাজ করতেন। কিন্তু সেই দোকান থেকে তাঁকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিজের স্বপ্ন ভেঙে যেতে দেননি যশস্বী। টাকা না থাকায় দাদারের আজাদ ময়দানের তাঁবুতে মাঠকর্মীদের সঙ্গে থাকতে শুরু করেছিলেন। নিজের খরচটুকু চালানোর জন্য ফুচকাও বিক্রি করতেন (মুম্বইয়ের ভাষায় পানিপুরি)। পরবর্তীতে যশস্বী বলেছিলেন, ‘আমি যে পথ হেঁটে এসেছি, সেটা আমার সঙ্গে চিরকাল থাকবে।’
আরও পড়ুন: ছোটোখাটো চেহারায় এত বড় ছয় মারো কীভাবে? জিজ্ঞেস করেছিল রোহিত, উত্তরটা সবাইকে জানালেন যশস্বী
যশস্বী বলেছিলেন, ‘আমার এখনও সেই ভাবনাচিন্তাই আছে। আমি একইরকম থাকি। আমার জীবনে কোনও বড়সড় পরিবর্তন হয়নি। আমি সেটা পরিবর্তন করতেও চাই না। আমি এতদিন যেভাবে এগিয়েছি, সেভাবেই এগিয়ে যেতে থাকব। আমি জানি যে নিজের স্বপ্নপূরণ করতে কতটা কঠোর পরিশ্রমের প্রয়োজন হয়। তাই আমি এরকমই থাকব। আমি নিজেকে চিনি। আমি অত্যন্ত আশীর্বাদধন্য। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ ক্রিকেটকে।’
যশস্বী জয়সওয়ালের কেরিয়ার
২০১৮-১৯ মরশুমে মুম্বইয়ের রঞ্জি ট্রফিতে অভিষেক হয় যশস্বীর। মাত্র ১৫ টি ম্যাচে ১,৮৪৫ রান করেছেন। গড় ৮০.২১। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইতিমধ্যে ন'টি শতরান এবং দুটি অর্ধশতরান করেছেন। সর্বকনিষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে দ্বিশতরানেরও রেকর্ড গড়েছেন। সেইসঙ্গে রবিবার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের বিরুদ্ধে শতরান করেও রেকর্ড গড়েছেন। আনক্যাপড খেলোয়াড় হিসেবে আইপিএলের একটি ইনিংসে সর্বোচ্চ রানের নজির গড়েন যশস্বী।
(IPL 2023: আইপিএল সংক্রান্ত যাবতীয় টাটকা খবর ও আপডেটের জন্য হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার স্পেশাল পেজে - ক্লিক করুন এখানে, তাহলেই প্রবেশ করবেন আইপিএলের দুনিয়ায়)
(এই খবরটি আপনি পড়তে পারেন HT App থেকেও। এবার HT App বাংলায়। HT App ডাউনলোড করার লিঙ্ক https://htipad.onelink.me/277p/p7me4aup)
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।